আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও ঠাকুরগাঁও-১ আসনের সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেনকে জেলা শহর থেকে বিতাড়িত করার হুমকি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা ও পৌরসভার প্যানেল মেয়র আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী। গত রোববার (১২ মে) সন্ধ্যায় শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চেয়ারম্যান প্রার্থী অ্যাডভোকেট অরুনাংশু দত্ত টিটোর নির্বাচনী সভায় বক্তব্যকালে এমপি রমেশকে বিতাড়িত করার হুমকি দেন তিনি।

এ সময় তার দেওয়া ২ মিনিট ২৭ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে মুহূর্তেই নেট দুনিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়।


ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ওই ভিডিওতে এমপি রমেশ চন্দ্র সেনের উদ্দেশ্যে পৌর কাউন্সিলর আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরীকে বলতে শোনা যায়, জীবনে তো ভোট করেনি, প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করেনি কারও সঙ্গে। ওই অটোপাস এমপি সবাইকে হুমকি দিয়ে পৌর কাউন্সিলরদের বিভ্রান্ত করেছে। আবার কিছু কাউন্সিলর বাসস্ট্যান্ডে কথা বলেছেন। কিন্তু তারা ঠিকই আছে, কোনোরকমে বিভ্রান্ত হয়নি। তাদের জোর করে আনা হয়েছে। উনারা (কাউন্সিলর) এখানে (বাসস্ট্যান্ড এলাকায়) এসে বলছেন আমরা আওয়ামী লীগের মূল স্রোতে আছি। উনারা যদি মূলস্রোত হয়, তাহলে আমরা কোন আওয়ামী লীগ করছি? যার বাপ (বাবা) করে জামায়াত, ভাই করে বিএনপি, একাই করে আওয়ামী লীগ, উনি নাকি মূলস্রোত। আজব কথা। আমরাই মূলস্রোত, মূল আওয়ামী লীগ।

কাইয়ুম চৌধুরী আরও বলেন, বেশি বাড়াবাড়ি করবেন না। ঠাকুরগাঁওয়ে আপনাদের ঠাঁই হবে না। ওই রমেশ সেনকে রুহিয়া থেকে টিটো দত্তই ঠাকুরগাঁওয়ে নিয়ে আসছে। আবার বিদায় করে দেব। রাত ৩টা বাজলেও টিটো দত্তকে পাওয়া যায়, আর উনি (রমেশ চন্দ্র সেন) এমন নেতা কলিংবেল বাজলেও তাকে পাওয়া যায় না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, আমরা তার কাছে (এমপি) এটা প্রত্যাশা করি না। তাই মনের ক্ষোভ থেকেই বলেছি। তিনি যেভাবে পক্ষপাতিত্ব করছেন তা মোটেও কাম্য নয়। যেহেতু আমরা সবাই একই দলের। তিনি আমাদের অভিভাবক। তিনি কেন পক্ষ নিয়ে কাজ করবেন।

এ ব্যাপারে এমপি রমেশ চন্দ্র সেন বলেন, সবাই একই দলের প্রার্থী। নির্বাচন যাতে অবাধ ও সুষ্ঠু হয়, কেউ যাতে নির্বাচনী সভাগুলোতে ভয় প্রদর্শন করতে না পারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বলা হয়েছে। আর যারা এ ধরনের হুমকি-ধামকি দেবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশকে আহ্বান জানান তিনি।

এমপি রমেশ চন্দ্র সেনকে হুমকি দেওয়ার প্রতিবাদে রুহিয়া থানা এলাকায় বিক্ষোভ



এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের পুলিশ সুপার উত্তম প্রসাদ পাঠকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এটা রিটার্নিং কর্মকর্তার বিষয়। তবে নির্বাচনকে সামনে রেখে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা প্রস্তত রয়েছি।

এমপিকে হুমকি দেওয়া প্রসঙ্গে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সোলায়মান আলীর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়। তবে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

এদিকে এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছে এমপি রমেশ চন্দ্র সেনের এলাকার লোকজন। বৃহস্পতিবার (১৬ মে) এর প্রতিবাদে রুহিয়া থানা এলাকায় এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেয়।



রুহিয়া থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি পার্থ সেন বলেন, এমপিকে হুমকি দেওয়ার বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নিতে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা-কর্মীর অভিযোগ, দলের চারজন উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন। অথচ যিনি আমাদের অভিভাবক (এমপি রমেশ চন্দ্র সেন) তিনি পক্ষপাতিত্ব করছেন। তবে এমপি রমেশ নিজেকে নিরপেক্ষ বলে দাবি করেছেন।

প্রসঙ্গত, ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের দ্বিতীয় ধাপে আগামী ২১ মে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে চারজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাদের মধ্যে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট অরুনাংশু দত্ত টিটো (আনারস), সাধারণ সম্পাদক মোশারুল ইসলাম সরকার (মোটরসাইকেল), সহ-সভাপতি রওশনুল হক তুষার (ঘোড়া) ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা কামরুল হাসান খোকন (কাপ-পিরিচ)।

একটি পৌরসভা ও ২২টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত সদর উপজেলার মোট ভোটার ৪ লাখ ৮৭ হাজার ১৭৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৪৪ হাজার ৯০৩, নারী ২ লাখ ৪২ হাজার ২৬৮ ও তৃতীয় লিঙ্গের ৪ জন। ১৮৫টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।